প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময় - টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট

বর্তমান সময়ে এসে প্রেগনেন্সি বিষয়টা একজন নারীর জন্য খুবই সাধারণ একটি বিষয়। এই প্রেগনেন্সি নিয়ে অধিকাংশ নারীদের মনে প্রশ্ন জাগে যেমন প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময় এবং টুথপেস্ট দিয়ে কিভাবে প্রেগনেন্সি টেস্ট করে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের এই অত্যন্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে এই বিষয়ে অবগত করব। তো আপনি কি প্রেগনেন্সি নিয়ে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য।
প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময় - টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট

সম্মানিত পাঠক আপনি যদি কিছুক্ষণ সময় অপচয় করে আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন, তাহলে আপনার অনেক উপকৃত হতে পারবেন। কেননা, আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা প্রেগনেন্ট হওয়ার লক্ষণগুলো, প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময়, সাবান দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট, চিনি ও ল্যাবে গিয়ে প্রেগনেন্সি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। তাই একদমই বহেলা না করে শেষ অবদি মনোযোগ সহকাড়ে পড়তে থাকুন।

ভূমিকা

বর্তমান সময়ে একজন নারী যখন গর্ভধারণ করেছে কিংবা মা হওয়ার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে অপেক্ষা না করে আপনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা বা প্রেগন্যান্ট কিনা এটি জেনে নেওয়াটা এখন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এখন একটি প্রেগনেন্সি কিটের সাহায্যে সময় নষ্ট না করে সঠিক ফলাফল দিতে পারে।

কিন্তু কিছু কিছু স্ময়ে অনেকের মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় সেটি হচ্ছে এ ধরনের প্রেগন্যান্সি কি ছাড়াও একজন মেয়ে কিভাবে প্রেগন্যান্ট টেস্ট করতে পারবে? জেনে অবাক হবেন যে আপনি সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতি প্রাকৃতিক উপায় কোনরকম কিট ছাড়াই প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করতে পারবেন। 

প্রেগনেন্ট হওয়ার লক্ষণ গুলো

প্রেগন্যান্ট এর লক্ষণ আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বমি কিংবা বমি হওয়ার লক্ষণ দেখতে পান তাহলে সেটা কিন্তু গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে। মূলত গর্ভধারণের ১ মাস পর থেকে এমনটা হয়ে থাকে। এ সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের স্তর বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও পিরিয়ড মিস হওয়ার গর্ভধারণের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে তবে, এটি একমাত্র লক্ষণ নয়। মহিলাদের পিরিয়ড মিস হলে টেস্টিং কিট বা ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে নিশ্চিত হয়ে নিন। তবে প্রেগন্যান্ট টেস্ট করার পূর্বে আপনি যদি আরো কিছু লক্ষণ খেয়াল করেন তাহলে গর্ভাবস্থা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে ধারণা পাওয়া যায়। সেই লক্ষণ গুলো হল-
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ
  • ভ্যাজাইনাল বিল্ডিং
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
  • বারবার প্রস্রাব হওয়া
  • মনের পরিবর্তন লক্ষন
  • খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি।
একজন মহিলার মধ্যে উপরের উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখলে প্রেগনেন্সির অনেকটাই সঠিকতা পাওয়া যায়। এ সময় আপনি যদি পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে চান, তাহলে প্রেগনেন্সি কিট কিংবা ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। আশা করছি প্রেগন্যান্ট হওয়ার লক্ষণ গুলো জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময় জেনে নেওয়া যাক।

প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময়

আমাদের মাঝে এমন অনেকে নারী আছেন যারা প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময় জানা নেই। তাই আমরা আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে পোষ্টের এই অংশে এই বিষয়ে আলোকপাত করেছি। প্রেগনেন্সি টেস্ট করে আপনি যদি ভুল ফলাফল পান তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে সঠিক সময়ে জন্য পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া ভুল ফলাফলের সম্মুখীন হলে, সেটা সঠিকাভবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 
  • আপনার যদি পিরিয়ড নিয়মিত হয়, তাহলে আপনার পিরিয়ড হওয়ার তারিখ পার হয়ে যাওয়ার অন্তত ১ সপ্তাহ বা ৭ দিন পরে টেস্ট করা উচিত।
  • যদি আপনার পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে থাকে, তাহলে আপনি গর্ভধারণের লক্ষণ (যেমন বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, স্তনবৃন্তে স্পর্শকাতরতা ভাব) অনুভব করলে টেস্ট করা উচিত। 
  • এছাড়া আপনি যদি সকাল বেলার মানে ঘুম থেকে ঊঠার প্রথম প্রস্রাব দিয়ে টেস্ট করেন, তাহলে আপনি সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাবেন। 
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, আপনার ডাক্তার দ্রুত প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন যেমন যদি আপনি গর্ভধারণের জন্য চেষ্টা করছেন বা পিরিয়ড দেরী হচ্ছে কিংবা যদি আপনার গর্ভপাতের ইতিহাস থেকে থাকে, আবার যদি আপনার ইকটোপিক গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকে ইত্যাদি।

সাবান দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট

আমাদের মাঝে এমন অনেকে নারী আছেন যারা সাবান দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা যায় এই সম্পর্কে অবগত নন হয়তো বা কখনো এই বিষয়ে শোনেননি। আবার অনেকে হয়তো সাবান দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা যায় এই বিষয়ে জানেন কিন্তু কিভাবে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হয় সেই সম্পর্কে জানেন না। তাই পোষ্টের এই অংশে আমরা জেনে নেব সাবান দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম।

সহজ মাধ্যম দিয়ে যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে সাবান দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা হচ্ছে সবথেকে সহজ মাধ্যম। যেটা আপনি বাড়িতে বসে থেকেই খুব সহজেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে আপনার প্রথম প্রস্রাবের নমুনা একটি ভালো বাটিতে নিয়ে ভালো মানের সাবানের টুকরা সেই বাটিতে যোগ করতে হবে।

এরপর প্রস্রাবের নমুনার সাথে সাবানের টুকরার সম্পূর্ণভাবে মিশে যেতে দিন। তারপরে যদি মিশ্রণটি বুদবুদ আকার হয়ে উঠেছে এটি লক্ষ্য করেন, তাহলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই টেস্টটি সবসময় যে সঠিক ফলাফল দিবে তা কিন্তু নয়।

এজন্য আপনি অন্য আরেকটি পরীক্ষা অবলম্বন করতে পারেন। অন্য একটি পরীক্ষা বলতে আপনি চাইলে টুথপেস্ট দিয়েও প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। তাহলে আসুন টুথপেস্ট দিয়ে আপনি কিভাবে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হয় সে সম্পর্কে জেনে নিই।

টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট

এখন আমরা আরেকটি ঘরোয়া পদ্ধতি টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। এক্ষেত্রে আপনার দৈনন্দিন ব্যবহৃত সামান্য পরিমাণ টুথপেস্ট একটি বাটিতে নিতে হবে। এরপর একই পাত্রে সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে আপনার প্রথম প্রস্রাবের নমুনা যোগ করতে হবে।

এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেই প্রস্রাবের দ্রবণটি মিশ্রিত হতে দিন। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে  পাত্রের দ্রবণে নীল এবং ফেনা দ্রবণ গঠন সৃষ্টি হতে দেখলে প্রেগন্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি এমনটা লক্ষণ খেয়াল না করেন তাহলে আপনি প্রেগন্যান্ট না-ও হতে পারেন। 

একইভাবে আপনি লবণ ও বেকিং সোডা দিয়েও প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারবেন। লবণ ও বেকিং সোডা এর ক্ষেত্রে একই উপায় অবলম্বন করতে হবে। শুধু ফলাফল তা আলাদা হবে। আলাদা বলতে লবনের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের দ্রবণটি ভালোমতো মিশে যাওয়ার পরে কেউ যদি খেয়াল করে যে সেই বাটিতে কৃমির মতো সাদা ক্লাস্টার গঠন করেছে তাহলে বুঝতে হবে আপনি গর্ভধারণ করেছেন। 

অপরদিকে বেকিং সোডার ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে একটি পাত্রের দ্রবণটি যদি কেমিক্যাল বিক্রিয়া বুদবুদ আকার গঠিত হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনি গর্ভধারণ করেছেন। আশা করছি টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবার আসুন আমরা চলুন চিনি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা উপায় জেনে নেই।

চিনি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট

দৈনন্দিন জীবনে প্রতিদিন ব্যবহৃত চিনির মতো বস্তু দিলেও আপনি প্রেগন্যান্ট কিনা তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে। এ বিষয়টি জেনে অবাক হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আপনি যদি চিনির মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট করাতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি বাটি নিতে হবে এরপর এক টেবিল চামচ পরিমাণ মতো চিনি নিতে হবে তারপরে প্রস্রাবের নমুনা নিতে হবে।

এরপর মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশ্রিত হওয়া পর্যন্ত কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হতে পারে। এরপর খেয়াল করুন চিনির দ্রবণ যদি পরিপূর্ণভাবে দ্রবীভূত না হয় সেক্ষেত্রে আপনার প্রেগন্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আর যদি এই দ্রবণটি ভালোমতো দ্রবীভূত না হয় তাহলে আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে আপনি হয়তো গর্ভবতী নন। আশা করি চিনি দিয়ে বাড়িতে বসে থেকেই আপনি যেভাবে প্রেগনেন্সি টেস্ট করবেন সেটা  জানতে পেরেছেন। আপনারা হয়তো ইতিমধ্যে সাবান, চিনি ও টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সির টেস্ট করার উপায় জানতে পেরেছেন। এবার আসুন, ল্যাবে গিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হবে সেটিও জেনে নিই।

ল্যাবে গিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট

প্রেগনেন্সি টেস্টের বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করার পরেও যদি আপনার মনের মধ্যে সন্দেহ থেকে থাকে তাহলে আপনি চাইলে ফার্মেসি্র দোকান থেকে যে কোন কোম্পানির একটি প্রেগনেন্সি কিট কিনে নিয়ে এসে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। প্রেগনেন্সি কিট প্রায় ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দেয়।

এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার প্রেগনেন্সি টেস্ট শতভাগ নিশ্চিত করতে ক্লিনিক এবার ল্যাবে গিয়ে রক্তের মাধ্যমে প্রেগনেন্সি নিশ্চিত করতে পারেন। প্রেগনেন্সি টেস্ট এর জন্য একটি ক্লিনিকে বা ল্যাবে গেলে একজন প্রত্যায়িত নিবন্ধিত নার্স আপনার রক্তের নমুনা নিবে। ফলাফল হিসেবে তারা এক থেকে তিন দিনের মধ্যে রক্তের এইচ সিজির মাত্রা সনাক্ত ও পরিমাপ করে আপনার গর্ভধারণের নিশ্চয়তা দেবেন। আশা করছি এই সম্পূর্ণ বিষয়টি আপনি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। 

লেখকের ইতিকথাঃ প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময়

আপনারা উক্ত ঘরোয়া উপায় প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদী। প্রিয় বন্ধুরা, আমরা ইতিমধ্যে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময় এবং প্রেগনেন্সি টেস্ট সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় তথ্য নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি, এ বিষয়ে জেনে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।

প্রেগনেন্সি টেস্ট সম্পর্কিত আজকের পোষ্টটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট করে জানাতে একদমই ভুলবেন না। আর অবশ্যই আপনার প্রিয় জনদের মাঝে এই পোষ্টটি শেয়ার করবেন। যাতে তারাও এই উপকারী তথ্যগুলো জানতে পারে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পোষ্টসমূহ পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url